May 9, 2024, 4:56 am

কারাগারের ভেতরেই হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনের পরিকল্পনা

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। ২০১৭ সাল থেকে এ সংগঠন তৈরির কাজ চলে।
সদস্যদের প্রশিক্ষণ শুরু হয় পার্বত্য অঞ্চলে। সম্প্রতি সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জানা যায়, সংগঠন তৈরির পুরো পরিকল্পনাই হয় কারাগারের ভেতর। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য কী, পাওয়া যায়নি পরিষ্কার কোনো ধারণা।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। তার আগে গতকাল বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার পাঁচ সদস্য।
সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায় গ্রেফতারদের নাম। তারা হলেন- নাটোরের আব্দুল্লাহ (২২), কুমিল্লার চান্দিনা তাজুল ইসলাম (৩৩), নারায়ণগঞ্জের জিয়াউদ্দিন (৩৭), মাদারীপুরের হাবিবুল্লাহ (১৯) ও নারায়ণগঞ্জের মাহামুদুল হাসান (১৮)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসি জানতে পারে, বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছিলেন তারা। গ্রেফতার আব্দুল্লাহ আনসার হাউস পরিচালনা করতেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব সদস্য হিজরতের উদ্দেশ্যে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে আসতেন, তাদের আনসার হাউজে জায়গা দিতেন তিনি। পরে সেই আনসার হাউস থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো পার্বত্য অঞ্চলে।

যেসব সদস্যরা আনসার হাউজে আসতেন তাদের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে রিসিভ করতেন তাজুল ও হাবিবুল্লাহ।
সিটিটিসির এ কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর আগস্টে কুমিল্লা থেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক যোগে সাত তরুণ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান হিজরতের উদ্দেশ্য। পরে এ বিষয়ে তদন্তের ধারাবাহিকতায় আবরার নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। ডাক্তার শাকের বিন ওয়ালী নামে এক জঙ্গি আবরারকে হিজরতের জন্য ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন। এরপর শাকেরকেও আমরা গ্রেফতার করি। তিনি এ নতুন জঙ্গি সংগঠনের দাওয়া বিভাগের প্রধান। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পড়াশোনা করেছেন শাকের। তিনি জঙ্গি সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকলেও আরেক হুজুরের নির্দেশে তরুণদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা কাজ করতেন।
শাকের বিন ওয়ালি প্রতি মাসে একবার পার্বত্য বান্দরবান এলাকায় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে অসুস্থ সদস্য বা কেউ কোনো রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা দিতেন। ঢাকা অবস্থানের সময় তিনি সংগঠনটিন প্রধান শামিন মাহফুজ ওরফে স্যারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। ফোনে সদস্যদের অসুস্থতার লক্ষণ শুনে ব্যবস্থাপত্র পাঠাতেন শাকের। এছাড়া জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে প্রশিক্ষণ শিবিরে থাকা পাহাড়ি সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিনের সদস্যরা আহত হলে তাদেরও সেখানে গিয়ে চিকিৎসা দিতেন।
শাকেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মহসিন এলায়েস ওরফে রিয়েল নামে আরও এক ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির একজন শীর্ষ নেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন। একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরিও করতেন তিনি।
ডাক্তার শাকের দুদিন আগে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখান থেকে জানা গেছে, নতুন সংগঠনটির প্রথম আমির মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি। ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর সিটিসিটি তাকে গ্রেফতার করে। তাকে সম্প্রতি রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার নামে এক ব্যক্তি সংগঠনের মূল মাস্টার। ২০১৪ সালে স্যার গ্রেফতার হন ডিবি’র হাতে। ২০১৫ সালেও একবার রক্সি গ্রেফতার হয়েছিলেন। দুজনই কারাগার থাকা অবস্থায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি আবু সাঈদের সান্নিধ্য পান।
কারাগারের অভ্যন্তরেই তিনজন বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় নতুন সংগঠনটি তৈরির ব্যাপারে একমত হন। পরে পরিকল্পনা সাজান। রক্সি ও শামিন জেল থেকে বের হয়ে জঙ্গিদের নিয়ে শক্তিশালী একটি সংগঠন গড়ার কাজ শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতায় সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ি এলাকায় ক্যাম্পের সন্ধান শুরু করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :